সাধূচরণ
নমস্কার পাঠকদের জন্য আজ একটি অসাধারণ শিক্ষনীয় ছোট গল্প (bengali short story) দেয়া হলো। শিক্ষনীয় ছোট গল্পটি সাধুচরনের ( Sadhucharan) লেখক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্মল সাধুখাঁ।
![]() |
১
শান্তশিষ্ট, মূর্খ আর গোবেচারা বলতে যা
বোঝায় সাধু হচ্ছে তাই। বাবা, মা, আত্মীয় পরিজন তার কেউ নাই সে ছোট বেলা থেকেই শহরে
একটা কারখানায় কাজ করত, ফলে তার খাওয়া পড়ার অভাব কোনদিন হয়নি। কিন্তু বিপদ ঘটল
হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব হয়ে; ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সরকার সারা দেশে লকডাউন
জারি করে দিল, তাদের কারখানাও বন্ধ হয়ে গেল। কাজ না থাকলে তো আর শহরে থাকা যায় না,
টাকা না থাকলে খাবে কি? তাই সাধু গ্রামের দিকে হাঁটতে শুরু করেছে।
আর মোটামুটি ঘণ্টা চারেক হাঁটলেই সে গ্রামে
পৌঁছে যাবে। সাধুর মনটা খুশিতে ভরে উঠল। অবশিষ্ট যে কটা টাকা পকেটে পরে রয়েছে তা দিয়ে
গ্রামের দোকান থেকে চাল, ডাল প্রভৃতি কিনে তারপর বাড়িতে প্রবেশ করবে, আজ তিনদিন সে
রুটি আর জল খেয়েই কাটিয়েছে। বাড়িতে গিয়েই আগে ভাত বসিয়ে দেবে; তিনদিন ভাত খেতে
পায়নি বলে কথা। ভাত খেতে পাওয়ার উৎসাহে আরো জোরে জোরে পা চালাতে লাগল সাধু।
একটা সময় তিনদিনের পরিশ্রমের অবসান ঘটিয়ে
সাধু গ্রামের সীমানা দেখতে পেল। সে একটু অবাকই হল; দেখল গ্রামে প্রবেশের বড় রাস্তাটা
বেড়া দিয়ে ঘেরা রয়েছে। কেন রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে তা অনেক ভেবেও কিছু বুঝতে পারল
না সে, কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা
করে বেড়া ডিঙিয়ে গ্রামের ভিতর প্রবেশ করল সাধু।
পুকুরটার পাশ দিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে সাধু নিজের বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। তখন তার সাথে নরেন খুড়োর দেখা হল,
নরেন খুড়ো তাদের গ্রামের প্রধান; গ্রামের সকলে তাঁকে খুব মান্যগন্যও করে। “কর্তা ভালো
আছেন?” সাধু তাঁকে জিজ্ঞাসা করল।
“একি! সাধু যে, এই দুর্দিনের সময় কি করতে
গ্রামে এলি বাবা? শহরেতেই তো ভালো থাকতিস, তারপর কেমন আছিস বল!" নরেন খুড়ো সাধুকে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল।
“ওই আছি কর্তা, সাধ করে কি আর গ্রামে এসেছি কারখানা
তো বন্ধ, কাজ না হলে খাব কি কর্তা? তাই তো সব শ্রমিকরাই গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে” সাধু বললো।
“সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু তোকে তো গ্রামে
থাকতে দেওয়া হবে না, গ্রামবাসীরা মিলে ঠিক করেছে শহরবাসী কাউকে গ্রামে প্রবেশ করতে
দেবে না। সবারই তো প্রাণের মায়া আছে। তার জন্যই তো গ্রামের সীমানায় বেড়া দেওয়া
হয়েছে, আর তোর সাহসকে বলি রে, তুই বেড়া ডিঙিয়ে কার অনুমতিতে গ্রামে ঢুকলি?” নরেন
খুড়ো উত্তেজিত কণ্ঠে বলল।
“কিন্তু কেন কর্তা?” সাধু বোকার মতো জিজ্ঞাসা
করল।
“কেন কি রে, করোনা তো শহরেই শুরু হয়েছে,
আর তুই তো এতদিন শহরেই ছিলিস্, কি থেকে যে কি হবে কিছু কি বলা যায়। গ্রামবাসী কোন
ঝুঁকি নিতে চায় না, তাই বাইরের কাউকে আর গ্রামে প্রবেশ করতে দেবে না” নরেন খুড়ো গলার
স্বর একটু নরম করেই সাধুকে বলল।
“তাহলে কর্তা, আমি থাকব কোথায়? খাবো কি? নিজের বাড়ি
থাকতেও আমি সেখানে থাকতে পারব না!!” সাধু আবার নরেন খুড়োকে জিজ্ঞাসা করল।
নরেন খুড়ো উত্তেজিত হয়ে বললেন, “না,
থাকতে পারবি না নিজের বাড়িতে। গ্রামের সীমানা পেরিয়ে মাঠের মাঝে খড়ের তাঁবু বানিয়ে
থাকতে হবে তোকে। সপ্তাহে একবার করে গ্রামের
সীমানার কাছে টাকা নিয়ে আসবি আমরা চাল, ডাল প্রভৃতি প্রয়োজনীয় জিনিস তোকে কিনে
দেব, সেগুলি নিয়ে আবার নিজের তাঁবুতে
ফিরে যাবি। খবরদার গ্রামের সীমানা পেরিয়ে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করবি না।”
ভীত কণ্ঠে সাধু জবাব দিল, “কিন্তু কর্তা,
আমার কাছে তো অত টাকা নেই যে বসে বসে খেতে পারব, গ্রামে কিছু কাজ না করতে পারলে আমি
টাকা পাব কোথায়?"
“কেন এতদিন কারখানায় কি ভেরণ্ডা ভাজছিলিস?
টাকা গুলো কি করলি সব? ফালতু বকে বকে মাথা গরম করাস নি, যা টাকা আছে দে চাল, ডাল, তেল,
নুন সব কিনে এনে দিচ্ছি। তারপর ওখান থেকে এক বোঝা খড় তুলে নিয়ে বিদায় হো এখন থেকে”
বলে নরেন খুড়ো সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলেন।
“আমার বাড়ি থাকতেও আমি মাঠে থাকব এটা
কি অন্যায় নয় কর্তা!” সাধু প্রতিবাদ করে উঠলো।
“আবার ন্যায় অন্যায় বুঝতে শিখে গেছিস দেখছি, শহরে
গিয়ে নিজেকে খুব বড় মনে করছিস নয়। পরিস্থিতি ঠিক হোক তারপর তোর ব্যবস্থা করছি” নরেন খুড়ো একচোট শাসালো
সাধুকে।
“না না কর্তা, আমি তো এমনি বললাম আমাকে
ক্ষমা করে দাও কর্তা” বলে সাধু তাঁর পায়ে ধরতে গেল।
“সর, সর হতচ্ছাড়া আমার থেকে দূরে থাকতে
বলেছি নয় তোকে। তাড়াতাড়ি বিদায় হো এখন থেকে” বলে এবার নরেন খুড়ো নিজের কাজে চলে
গেলেন। সাধুও নিজের অদৃষ্টকে দোষ দিয়ে ক্ষুণ্ণ মনে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনে নতুন
বাসস্থান তৈরি করার জন্য মাঠের দিকে চলে
এল।
২
জোৎস্নাভরা রাত, মাঠের ধারে ছোট ডোবাটার
পাড়ে সাধু বিমর্ষ মুখে বসে আছে। আজ চারদিন হল সাধু জল ছাড়া কিছু খেতে পায়নি, তার
হাতে আর একটা টাকাও অবশিষ্ট নেই। জমানো টাকায় সাধুর সপ্তাহ তিনেক চলেছিল, জিনিসপত্রের
যা দাম বেড়েছে, না হলে হয়ত আরো কিছুদিন সে চালিয়ে নিতে পারত। গ্রামে যে কাজ করে
কিছু টাকা উপার্জন করবে সে রাস্তাও বন্ধ, কিন্তু পেট তো আর কারো কথা শুনবে না। সকালে
যেমন প্রতিদিন সূর্য ওঠে, তেমনই আমাদেরও প্রতিদিন খিদে পায়। আসলে খিদের সীমানায় কোনো
কাঁটা তারের বেড়া হয় না, ক্ষুদার্থ অসহায় মানুষদের কোন দেশ হয় না। কারণ তারা চিরকাল
সমাজ, সরকারের হিসেবের বাইরেই থেকে যায়।
বসে বসে সাধু ভাবছিল, এটা আমার নিজেরই
গ্রাম, এই গ্রামেই আমি কত খেলা করেছি, বন্ধুদের সাথে কত ঝগড়া, মারামারি করেছি, একই
থালায় বসে খাবার খেয়েছি; আর আজ তারাই আমাকে গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছে না। আজ চারদিন যে
খাওয়া হয়নি সেটা কেউ একবারও দেখল না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কি মনে হল সাধু উঠে দাড়াল,
তারপর দৃঢ় পদক্ষেপে সে নিজের বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করল। গ্রামের সীমানায় পৌঁছে
বেড়াটা ডিঙিয়ে আবার হাঁটতে লাগল।
খিদেয়, তেষ্টায় ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরটা
নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সে যে কোথায় চলেছে তা নিজেও বুঝতে পারল না। অবশেষে একটা বাড়ির
সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা মারার জন্য হাতটা তুলতেই সাধুর মাথা ঘুরে গেল, সে জ্ঞান
হারিয়ে দরজার সামনেই লুটিয়ে পড়ল।
কার যেন চিৎকারে সাধুর জ্ঞান ফিরল, চোখ
খুলে তাকিয়ে সে দেখল, গ্রামের সীমানার কাছে বুড়ো বট গাছটার নীচে শুয়ে আছে। আর নিরাপদ
দূরত্ব বজায় রেখে গ্রামের সবাই তাকে গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
গ্রামের প্রধান নরেন খুড়ো কিছুটা তার দিকে এগিয়ে
এল, “তোকে বারবার বারণ করা সত্ত্বেও তুই আবার গ্রামে ধুকেছিলিস, তাও আবার রাতের অন্ধকারে
চুরি করতে। তোর কি সাহস হয়েছে রে সাধু, আবার খোলা মুখে বসে আছিস!! সরকার থেকে বারবার
নাক, মুখ ঢাকা দিয়ে ঘুরতে বলছে, আর তুই কিনা বাইরে থেকে এসে মুখে চাপা না দিয়েই গ্রামের
মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। আমাদেরকে কি তুই বাঁচতে দিবি না। তুই আমাদের গ্রামের ছেলে তাই
তোকে গ্রামের সীমানার বাইরে থাকতে দিয়েছিলাম, এখন দেখছি কি মস্ত বড় ভুলটাই না করেছিলাম।
না, আর নয় এবার তোর একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে দেখছি।”
নরেন খুড়ো আবার গ্রামবাসীদের এগিয়ে গেলেন,
“সাধুকে কি করা যায় বল তোমরা সবাই?”
গ্রামবাসীদের মধ্যে একটা বিশাল গুঞ্জন
শুরু হল। কেউ বললো হতচ্ছাড়াকে পুলিশের হাতে তুলে দাও চুরি করতে আসার মজা বুঝৰে তাহলে।
আবার অনেকে বললো, না তাতে ব্যাটা এই দুর্দিনেও ঠিক সময়ে খেতে পাবে, তার থেকে বরং গ্রামের
বাইরে না খেতে দিয়ে কড়া পাহারায় রাখা হোক। অনেকে আবার বললো ব্যাটাছেলেকে গাছের সঙ্গে
বেঁধে গায়ে পিঁপড়ে ছেড়ে দিলে কেমন হয়?
কোন ঐক্যমত না হওয়ায় নরেন খুড়ো সবাইকে
শান্ত করালেন, তারপর সাধুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “সাধু, তুই আগে বল কেন চুরি করতে এসেছিলিসা?”
“আজ্ঞে কর্তা আমি তো চুরি করতে আসিনি, খাবারের সন্ধানে
গ্রামে এসেছিলাম। তারপর কি হয়েছে কিছু মনে নেই আমার” করুন স্বরে সাধু বললো।
নৱেন খুড়ো ভয়াল স্বরে হেসে উঠলো, “খাবারের সন্ধানে
এসেছিলিস, বলি তোর বাপ কি গ্রামে খাবার নিয়ে বসে ছিল নাকি?”
সাধু কি উত্তর দেবে ঠিক বুঝতে না পেরে
দুবার ঘাড় নাড়ল, যার অর্থ নাও হয় আবার হ্যাঁও হয়।
“ঠিক আছে তুই যখন খেতেই এসেছিলিস তখন তোকে আমিই খেতে
দেব তোকে এখানে বসেই খেতে আর এটাই গ্রামে তোর শেষ খাওয়া হবে। খাওয়ার পর গ্রাম আর
গ্রামের ত্রিসীমানা ছেড়ে তোকে চলে যেতে হবে” মৃদু হাসতে হাসতে নরেন খুড়ো বললো।
সাধুর চোখে একবিন্দু আশার আলো জ্বললেও
নরেন খুড়োর ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকায় সে নীরবে বসে রইল।
নরেন খুড়ো গ্রামের একজন ছোকরাকে ডেকে
আদেশ দিল, “এই রাসু তাড়াতাড়ি যা দোকান থেকে আমার নাম করে একশো গ্রাম মুড়ি আর দুশো
গ্রাম কাঁচা লঙ্কা নিয়ে আয়। ব্যাটার খাওয়ার শখ মিটিয়ে দিই।”
কিছুক্ষন পর রাসু মুড়ি আর কাঁচা লঙ্কা নিয়ে হাজির
হলা নরেন খুড়ো রাসুর থেকে মুড়ির ঠোঙাটা নিয়ে সাধুর দিকে বাড়িয়ে দিল, “নে হতচ্ছাড়া
খা, খেয়ে বিদায় হো এখান থেকে।“
চারদিনের অনাহারক্লিষ্ট সাধু কাঁচালঙ্কা
সুদ্ধ মুড়ি গোগ্রাসে গিলতে লাগল। সশা দিয়ে মুড়ি খাবার মতো এত গুলো লঙ্কা সে খেয়ে
ফেলল খিদের জ্বালায়। খাবার পর সাধু টের পেল, তার শরীরে এবার তীব্র ঝালের প্রতিক্রিয়া
শুরু হয়েছে। গলা, বুক, জিভ, কান সব জ্বলছে, দরদর করে ঘাম ঝরছে তার শরীর থেকে।
৩
পশ্চিম আকাশে এই কিছুক্ষন আগে সূর্য ডুবল।
সাধু গ্রাম থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা বাজারে উপস্থিত হয়েছে। কোথায়, কোনদিকে
যে এসেছে তা সাধু জানে না, ঝালের চোটে এক উন্মত্ত নেশায় সে হেঁটে বেরিয়েছে। হঠাৎ
সে আবার খিদেটা অনুভব করল, শরীরটা যেন খিদেয় মোচড় দিয়ে উঠলো। আর সহ্য করতে না পেরে
সে সামনের চায়ের দোকানটাতে ঢুকে তরকারি আর মুড়ি দিতে বললো। অনেক দিন পর সে তৃপ্তি
সহকারে খাচ্ছে; ধীরে ধীরে খাওয়া শেষ করল। এবার টাকা দিতে হবে, একবার সাধু ভাবল ছুটে
পালিয়ে যাবে দোকান থেকে; কিন্তু এই অবসন্ন শরীরে তা সম্ভব নয় ভেবে নিরস্ত্র হল। সে
অকপটে দোকানদারকে বলেই দিল, “কর্তা, আমার কাছে মুড়ির দাম মেটাবার মত টাকা নেই।”
দোকানদার রূপেনবাবু কিছুক্ষন কটমট করে
সাধুর দিকে দেখল। সাধু ভাবল এইবার বুঝি দোকানদার আমাকে মেরে দোকান থেকে বের করে দেবে।
কিন্তু সেরকম কিছু ঘটল না। রুপেন বাবু সাধুর পোষাক, চেহারা এবং অনাহারক্লিষ্ট মুখের
দিকে তাকিয়ে বলল, “কতদিন না খেয়ে আছ ভাই?”
সাধু এই ব্যতিক্রমী ব্যাবহারে কিছুটা হকচকিয়ে
গেল, সে বললো, “আজ্ঞে কর্তা পাঁচদিন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে চায়ের কাপ আর থালাগুলো
ধুয়ে ফেল” তিনি বললেন।
সাধু থালা ধুতে বসল। থালাগুলোতে অবশিষ্ট
যে খাবার গুলো পড়েছিল সেগুলোও সে খেয়ে নিল। এখন অনেকটা শক্তি ফিরে এসেছে তার মধ্যে,
অনেকদিন পর সে পেট ভরে খেয়েছে। মন দিয়ে পরিষ্কার করে থালা আর কাপগুলো ধুয়ে ফেলল
সে। রূপেন বাবু তার কাজ দেখে খুবই খুশি হল, তিনি বললেন, “বাঃ কাজকর্ম তো ভালই করতে
পারিস দেখছি তাহলে কাজ করে খাস না কেন?”
“শহরে তো কাজ করতাম কর্তা। ওই যে কি একটা
রোগ হচ্ছে তার জন্য আমাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে, গ্রামে গেলাম সেখানেও থাকতে দিল
না” দুঃখিত হয়ে সাধু বললো।
“ও বুঝতে পেরেছি এবার কি হয়েছে, তুই পরিযায়ী
শ্রমিক তাই গ্রামেও থাকতে দেয়নি তোকে। তুই আমার কাছে কাজ করবি? কিন্তু খবরদার তুই
যে শহর থেকে এসেছিস সে কথা আর কখনো মুখে অনবি না” রুপেন বাবু বললেন।
কাজের কথা শুনে সাধু তো একেবারে হাতে স্বর্গ
পেল। “হ্যাঁ কর্তা, আপনি বললে করব বৈকি। কিন্তু শহরে থাকি বললে কি হবে কর্তা? সাধু
বোকার মতো জিজ্ঞাসা করলো।
“তুই একদম হাঁদারাম রে, নইলে আমাকে কখনো
গর্ব করে বলতিস না যে, তুই শহরে কাজ করতিস। নে, এখন কাজ কর রাতে কথা বলব তোর সাথে,
দোকানে অনেক খদ্দের আসছে এবার” রূপেনবাবু একটু ঝাঁজের সাথেই সাধুকে বললো।
রাত দশটা, দোকান বন্ধ করে দিয়ে সাধু খাওয়া
দাওয়া করে রুপেনবাবুর সাথেই দোকানের ভিতর শুয়ে পড়ল। দুটো মাদুর পেতে পাশাপাশি শুয়েছে
তারা। “তোর নামই তো এখনও জিজ্ঞাসা করা হয় নি রে? কি নাম তোর? রুপেনবাবু সাধুকে জিজ্ঞাসা
করল৷
“আজ্ঞে কর্তা সাধু, সাধুচরণ” সাধু জবাব
দিল।
“বাঃ খাসা নামখানা তো! তারপর তুই যখন গ্রামে
গেলি সবাই তোকে কি বললো বল শুনি?” কৌতূহলী হয়ে রুপেনবাবু বললেন।
প্রথম থেকে শুরু করে তাকে চোর অপবাদ দিয়ে গ্রাম
থেকে বের করে দেওয়া পর্যন্ত সবই বলে গেল। সব শুনে রূপেনবাবু বললেন, “বাঃ বাঃ বাঃ,
তোর বাবা মা কত আশা করে তোর নাম রেখেছিল সাধুচরণ, তারা ভেবেছিলেন তাদের ছেলে একজন সৎ,
সজ্জন, ভালো ব্যাক্তি হবে, আর শেষে কিনা তোকে চোর বদনাম দিয়ে গ্রাম থেকে বের করে দিল!”
সাধুর চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল পড়ল,
“হ্যাঁ কর্তা, তখন আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। নিজের প্রতি যা রাগ হচ্ছিল কি বলব তোমায়
কর্তা, কেন যে লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রামে ঢুকতে গেলাম?”
“ওই রকমই হয় রে সাধু!” দীর্ঘশ্বাস ফেলে রূপেনবাবু বললেন।
সাধু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করল, “কি
রকম কর্তা?”
“ওই নামের কথা বলছি রে, মানুষ যে বিষয়ের
উপর গুরুত্ব দিয়ে ছেলেদের নামকরণ করে, ছেলেদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা তার বিপরীত দিকেই
প্রতিফলিত হয়। আমাদের ইতিহাসও সেরকমই বলে। অনেক কাল আগে ছোটবেলায় পড়েছিলাম, অজাতশত্রু
নামে একটা রাজা ছিল। তাঁর বাবা মা ভালোবেসে নাম রেখেছিল অজাতশত্রু; এর মানে হচ্ছে যার
কোন শত্রু নেই, কিন্তু তিনি যখন রাজা হলেন দেখা গেল সবসময়ই শত্রুরা তাঁকে ঘিরে রয়েছে।
ইতিহাসের কথা বাদ দে, আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমার একটা সহপাঠী ছিল, তার নাম ছিল
নির্মল। হতচ্ছাড়ার নামই পরিষ্কার কাজের বেলায় অক্টরম্ভা, বড় বড় চুল, বড় বড় নখ
আর মুখের ভাষা যা নোংরা তা আর বলার মত নয়, অথচ তার নাম নির্মল” একটানা বলে রুরূপেনবাবু থামলেন।
“বলছি কর্তা, তুমি ওত পড়াশোনা করে চায়ের
দোকান চালাচ্ছো কেন” সাধু রুপেনবাবুকে জিজ্ঞাসা করল।
রূপেনবাবু বললেন, “আরে হাঁদারাম চাকরি
পাওয়া কি ওত সহজ ব্যাপার! আর আমি তো বেশি দূর লেখাপড়া করিনি, বাড়ির আর্থিক অবস্থা
ভালো ছিল না তাই এই চায়ের দোকানটা খুলেছিলাম।”
“আচ্ছা কর্তা বড়লোক হতে গেলে কি করতে
হবে?” সাধু জিজ্ঞাসা করল।
“কেন বেশ তো আছিস, আবার বড়লোক হবার স্বপ্ন
কেন?” হাসতে হাসতে রূপেনবাবু বললেন।
“বড়লোক না হলে কেউ ভালোভাবে কথা বলে না,
সম্মান করে না কর্তা। আমি যেই শহরে কাজ করতাম ওখানে মুখুজ্জেদের ছোট ছেলেটাও কাজ করত;
যখন শহরে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল তখন সেও আমার মত গ্রামে এসেছিল। কিন্তু আমাকে গ্রামে
ঢুকতে দিল না আর সে দেখলাম গ্রামে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। টাকা থাকলে সবই হয় কর্তা।
আমাকে যেদিন চোর বলে সবাই বের করে দিল সেদিন ওই ছেলেটাকেও আমি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে
দেখেছিলাম” করুন স্বরে সাধু বললো।
“এটা তুই ঠিকই বলেছিস সাধু, যাদের টাকা
আছে সমাজটা যেন তাদেরই হাতের পুতুল” সাধুকে স্বান্তনা দিয়ে রুপেনবাবু বললেন।
“একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গিয়েছিলাম
কর্তা, আমি যে শহরে থাকতাম তুমি সেটা বলতে কেন বারণ করেছিলে বললে না তো?” সাধু আবার
বোকার মত প্রশ্ন করল।
“আরে হাঁদারাম এতক্ষণ কি শুনলি তাহলে নিজেই
তো বললি যে শহরে থাকতিস বলে তোকে গ্রামের মানুষ গ্রামে থাকতে দেয় নি। এখানে যদি সবাইকে
বলিস যে তুই শহরে ছিলিস এতদিন, তাহলে এখান থেকেও সবাই বের করে দেবে তোকে। তোর সাথে
কথা বলাই বৃথা, আর বকতে হবে না ঘুমো এবার” বিরক্ত হয়ে রূপেনবাবু বললেন।
অনেকদিন পর সাধু তৃপ্তি করে ঘুমাল। সে
স্বপ্ন দেখল অনেক বড়লোক হয়ে গেছে, রাজপ্রাসাদের মত বাড়িতে বসবাস করছে। একটা মোটর
গাড়ি করে বিকালে সে বেড়াতে বেরিয়েছে আর কত লোক দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান দিচ্ছে।
৪
এরপর আরো কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে।
সাধুর মনে এখন একটাই চিন্তা যেমন করেই হোক তাকে বড়লোক হতে হবে। দোকানে আসা সব ধনী
খরিদ্বারদের সে লক্ষ্য করতে শুরু করেছে; তাদের আচার ব্যাবহার, পোশাক আশাক, কথাবার্তা
সব কিছুই তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে লক্ষ্য করেছে। তার চোখে ধরা পড়ল যোগেশ আচার্য, একজন নামকরা
জ্যোতিষী, প্রভূত ধনের অধিকারী এবং সবাই তাকে খুব সম্মানও করে। ভানু মিস্ত্রি একজন দক্ষ কাঠ মিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি হলেও অনেক
টাকা আছে তার। তারপর হাবলা মস্তান, গ্রামে দাদাগিরি করে অনেক টাকা করেছে। সাধু সবাইকে
দেখে আর ভাবে, কি উপায়ে সে অনেক টাকার, অনেক সম্মানের মালিক হবে।
হঠাৎ একদিন চায়ের কাপ ধুতে ধুতে সাধু
দেখল এক থুরথুরে বুড়ো লাঠি হাতে তাদের দোকানের দিকে আসছে। বয়স আশির বেশি তো হবেই
নব্বইও হতে পারে। এক মাথা সাদা চুল, গায়ে একটা ছেড়া গেঞ্জি,
ধুটিতারও অনেক জায়গায় তালি মারা। বুড়োকে দেখে হাবলা মস্তান হাতের সিগারেটটা লুকিয়ে
নিভিয়ে ফেলল, তারপর বুড়োর দিকে তাকিয়ে হালকা হাসল। চা দিতে দেরি হচ্ছিল বলে ভানু
মিগ্রী চেঁচাছিল, সেও গলার স্বর পাল্টে ফেলল৷ সাধু সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হল যখন সে
দেখল, সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী অতুল বাবু গাড়ি করে কোথাও একটা যাচ্ছিলেন, তিনিও গাড়ি
থেকে নেমে বুড়োকে প্রণাম করলেন, বুড়োর সাথে কথা বলে তারপর নিজের কাজে গেলেন। বুড়ো
এরপর দোকানে এসে দুটো আটার বিস্কুট কিনে ধীর পায়ে দোকান থেকে বেরিয়ে গেল।
সাধু বুঝে গেল এই বুড়োটা অনেক ধনী ব্যক্তি,
ওনার সাথেই তাকে যোগাযোগ করতে হবে। যদিও কেন যে বুড়োটা ছেঁড়া পোশাক পড়েছিল সেটা
সে বুঝতে পারল না। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সাধু রূপেনবাবুকে জিজ্ঞাসা করল, “কর্তা,
আজ সকালে যেই বুড়োটা দোকানে এসেছিল উনি কে? দেখলাম সবাই খুব সম্মান করল তাঁকে।”
“আরে উনি তো রতন বাবু, সম্মান করবে না”
রূপেনবাবু বললেন, “ওনারই তো স্বাধীনতা এনেছিল; সে কি কম কথা!”
সাধু বললো, “স্বাধীনতা মানে সেটা কি বড় ধরনের কিছু
একটা, মানে......... ”
রুপেনবাবু বললেন, “স্বাধীনতা মানে বুঝবি
তুই, তা হলেই হয়েছে। অতি কষ্টে পেতে হয় এ জিনিস আর রক্ষা করা আরো কঠিন।” তারপর বললেন,
“নে নে ফালতু কথা থাক এবার ঘুমিয়ে পড়া।”
সাধুর যা বোঝার বুঝে গেল, স্বাধীনতা নামে
একখানি দামী জিনিস রতন বুড়োর কাছে আছে, যার জোরেই তাঁর এত সম্মান। সে রূপেনবাবুকে
জিজ্ঞাসা করে আরো জানল যে, রতন বুড়োর কোন সন্তান নেই। সাধু ভেবে নিল তার মানে বুড়ো
মরলে তাঁর সম্পদ ভোগ করবার কেউ নেই। একবার যদি বুড়োর সাথে দেখা করে নিজের সমস্যার
কথা বলা যায়; আর বুড়ো মরার আগে যদি কিছুটা স্বাধীনতা নামী দামী জিনিস তাকে দান করে
তাহলে সে বাকি জীবনটা রাজার হালে কাটাতে পারবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ, সাধু রূপেনবাবুর
থেকে রতন বুড়োর ঠিকানা জেনে নিল৷
পরেরদিন দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়া করে সাধু
বেরিয়ে পড়ল রতন বুড়োর সাথে দেখা করতে। রূপেনবাবুর দেওয়া ঠিকানায় এসে তো সে অবাক;
এ কোথায় এসেছে, নিশ্চই ঠিকানা ভুল হয়েছে। সে একটা জরাজীর্ণ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে
রয়েছে, হিসেব মত তো রতন বুড়োর বড় অট্টালিকা হওয়ার কথা। সাধু একবার ভাবল দোকানে
ফিরে গিয়ে ঠিকানাটা ঠিক করে জেনে তারপর আবার আসবে; কিন্তু তাতে বড্ড দেরি হয়ে যাবে।
তার চেয়ে বরং এই বাড়িতে ঢুকেই রতন বুড়োর ঠিকানাটা জেনে নেওয়া যেতে পারে। একটু দোনামনা
করে সাধু জরাজীর্ণ বাড়িটায় প্রবেশ করল।
বাড়িটায় ঢুকে সাধু আবার অবাক হয়ে গেল,
সামনে দেখল রতন বুড়ো শুয়ে রয়েছে। একটু গলা খাকরানি দিয়ে সে বৃদ্ধের দৃষ্টি আকর্ষণ
করল। রতন বুড়ো হঠাৎ বাড়ির মধ্যে অপরিচিত ব্যাক্তি দেখে প্রশ্ন করল, “কে হে, এই ভরদুপুরে
কি মনে করে? এই সময় তো কেউ আমার কাছে আসে না!”
“আজ্ঞে কর্তা, আমার নাম সাধু। আমি রূপেনবাবুর
দোকানে কাজ করি। বড় অর্থকষ্ট আমার, আপনার থেকে তাই কিছু সম্পদ ভিক্ষা করতে এসেছি”
বিনয়ের সাথে সাধু বললো।
“আমার কাছে তুই কি সম্পদ পাবি রে? দেখছিস
না আমার বাড়ির অবস্থা, বর্ষাকালে বাড়ির ভিতরে জল ঢোকে তাও মেরামত করতে পারি নি, দুবেলা
ঠিকমত খাবারও পাই না। গ্রামের কোউ দয়া করে খেতে দিলে তারপর খেতে পাই” দুঃখিত হয়ে রতন বুড়ো বললেন।
“আপনার কাছে স্বাধীনতা নামে একখানি দামী
জিনিস আছে শুনলাম, আমি ওটার কথাই বলছি কর্তা” সাধু বললো।
“স্বাধীনতা নামে দামী জিনিস! কে বললো তোকে?”
রতন বুড়ো খুবই অবাক।
সাধু বললো, “তেমনই তো শুনলাম কর্তা। আপনি
নাকি স্বাধীনতা নিয়ে এসেছেন, তার জোরেই এত মানসম্মান আপনার। আমি তো নিজের চোখেই দেখেছি
সবাই খুব মান্যগণ্য করে আপনাকে।”
হো হো করে হেসে উঠলো রতন বুড়ো। হাসি যেন
আর থামতেই চায় না। শেষে কোনরকমে হাসি থামিয়ে বললেন, “তা তোমার এত অর্থের প্রয়োজন
কিসের? দিব্যি তো চায়ের দোকানে কাজ করে পেট চলে যাচ্ছে।”
“তা যাচ্ছে কর্তা, তবে টাকা পয়সা না থাকলে, ধনী
না হলে কেউ সম্মান দেয় না” হতাশ
হরে সাধু বললো।
“কে বলেছে তোকে টাকা না থাকলে, ধনী না
হলে কেউ সম্মান করে না। আমার তো টাকাপয়সা, ঘরবাড়ি কিছুই নেই তবুও তো তোর মনে হয়েছে
লোকে আমাকে সম্মান করে” রতন বুড়ো বললো।
“আপনার কাছে যে স্বাধীনতা আছে কর্তা, তাই
তো সবাই আপনাকে এত সম্মান করে। আমি তো সেই জন্যই আপনার কাছে একটুখানি স্বাধীনতা সম্পদ
ভিক্ষা চাইছি। দিন না কর্তা, কিছুটা স্বাধীনতা দিন না” সাধু রতন বুড়োর পায়ের কাছে
বসে ভিক্ষা চাইল।
“আসলে কি জানিস সাধু, এ জিনিস কেউ কাউকে
দিতে পারে না। চুরিও করা যায় না, মেহনত করে পেতে হয় বুঝলি” রতন খুড়ো সাধুকে বোঝাল।
সাধু বললো, “আমি মুখ্য মানুষ, পরের দোকানে
কাজ করি; অতশত বুঝব কি করে কর্তা!”
“চেষ্টা করলে ঠিক পারবি। একসময় আমাদের
দেশের মানুষও এমনই ভাবত, তাই তখন তাদের বড় কষ্ট ছিল। মনের জোর আন, মাথাটা একটু কাজে
লাগা দেখবি তুই কখন স্বাধীনতা পেয়ে গেছিস। জিনিসটা যদি একবার পেয়ে যাস তাহলে তুই
রাজা। তখন আর কাউকে পরোয়া করবার
দরকার নেই” রতন বুড়ো বললেন।
“তাহলে কর্তা, আপনি তো স্বাধীনতা পেয়ে
রাজা হয়ে গেছেন। কিন্তু একটু আগেই তো আপনি বললেন যে, দুবেলা ঠিকমত খাবার পান না, বর্ষায়
বাড়িতে জল পড়ে তাও মেরামত করতে পারেননি। রাজাদের কি এইরকম দুর্গতি হয় কর্তা?” সাধু
কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করল।
“আসলে সাধু, এমন অনেক প্রশ্ন আছে যার উত্তর
চাইবার মানুষ নেই। কারণ প্রতিবাদী মানুষের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়ে প্রতিবাদের ভাষাটাই
বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে” রতন বুড়ো হতাশ কণ্ঠে জবাব দিল।
সাধু আবার প্রশ্ন করল, “তাহলে কর্তা, আমরা
কি এই প্রশ্নের উত্তর পাব না?”
“অবশ্যই পাবি, শুধু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা
কর আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা কর, একদিন ঠিকই উত্তর পাবি” রতন বুড়ো বললেন।
সমাপ্ত
আমাদের Email ID - thepointbangla@gmail.com
WebSite - https://www.pointbangla.com/
লেখার সাথে আপনার নাম , ফটো , পরিচয় দিয়ে পাঠাবেন। লেখা প্রকাশিত হলে আপনি আমাদের ওয়েবসাইট ফেইসবুক-টুইটার-ইউটিউব এ দেখতে পারবেন।