১২২২ সালে দেবী আনন্দময়ী মা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মানকর শ্মশানে আদ্যামায়ের পুজো শুরু করেন তৎকালীন কবিরাজ রাজবল্লভ গুপ্ত
মানকর আনন্দময়ী মা কালী |
বর্ধমানের মানকর আনন্দময়ী মা কালীর কথা | Point Bangal
যুগ যুগ ধরে আজও ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন মানকরের কবিরাজ বাড়ির মা আনন্দময়ী। ১৭৩৭ শকাব্দের ১২২২ সালে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে মানকর শ্মশানে আদ্যামায়ের পুজো শুরু করেন তৎকালীন কবিরাজ রাজবল্লভ গুপ্ত। বর্তমানে প্রায় ১১ বিঘা জমির ওপর আনন্দময়ীতলা। মানকর স্টেশন থেকে ২ কিলোমিটার দুরে গুসকরা রোডেই দেবীর মন্দির। সখানে বিশাল পুষ্করিণী ও নাটমন্দির রয়েছে। পর এখানেই মা কালী আনন্দময়ী রূপে পূজিত । কষ্টিপাথরের মূর্তি। তৎকালীন বর্ধমানের রাজা লয়চাদের একমাত্র কন্যাকে মুমূর্ষু অবস্থা থেকে = করেছিলেন কবিরাজ রাজবল্লভ গুপ্ত। তার ন রাজা উদয়চাঁদ মানকরের কিছু জমির মিদারিত্ব দিয়েছিলেন। পরে রাজবল্লভকে রাজা বৈদ্য হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন।
বর্ধমানের মানকর আনন্দময়ী মা কালী |
শিবলিঙ্গ রয়েছে। মন্দিরের সামনে রয়েছে নাটমন্দির। মন্দিরের পাশে পুষ্করিণী। ওই জলে আনন্দময়ী মায়ের নিত্যস্নান ও পুজোর কাজ হয়। কথিত আছে, ওই পুষ্করিণীর জল কখনও কাশী থেকে মায়ের কষ্টিপাথরের মূর্তি নিয়ে শুকোয় না। বর্তমানে কবিরাজ বাড়ির পুজোর ছিলেন। প্রায় সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন গোপাল টতে শিব শায়িত। শিবের নাভি থেকে উঠেছে কবিরাজ।
বর্ধমানের মানকরের আনন্দময়ী মা কালী
বর্ধমানের মানকরের আনন্দময়ী মা কালী |
তিনি জানান, জল কমে যাওয়ায় একবার আশপাশের পুকুর থেকে জল ভর্তির ষ্ঠিত। পরবর্তী কালে দুষ্কৃতীরা ওই মূর্তির ওপর জন্য আটটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প চালানো ভ করায় নতুন করে তৈরি করেছিলেন হয়েছিল। কিন্তু দিনরাত পাম্প চালিয়েও প্লটের শিল্পী নবীন ভাস্কর। আনন্দময়ীর মূল পুষ্করিণী ভর্তি করা যায়নি। বর্ষার জলে ভর্তি রের দু'পাশে শ্বেতপাথরের দুই মহাকাল হয়। তিনি আরও জানান, একবার স্থানীয় তিন পাথরের পদ্ম। তার ওপর আদ্যামা পদ্মাসনে দুষ্কৃতী মায়ের কষ্টিপাথরের মূর্তি চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। তবে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারেনি। মায়ের পুকুরপাড় পর্যন্ত গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল তিনজনেই। পরবর্তীকালে তাদের পাপকর্মের ফল পেয়েছিল। মূর্তিটি যে তুলেছিল পরদিনই সে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়। মায়ের মূর্তির চোখে যে আঘাত করেছিল তার দুই চোখই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হাতে যে আঘাত করেছিল তার একটি হাত বোমাতে উড়ে গিয়েছিল।
বর্ধমানের মানকরের আনন্দময়ী মা কালী |
বর্ধমানের মানকরের আনন্দময়ী মা কালী |
কথিত আছে, আনন্দময়ী মা ছলচাতুরী পছন্দ করেন না। একবার উত্তর ২৪ পরগনার এক ডাকাত সর্দার রাতের অন্ধকারে মন্দিরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে মায়ের রুপোর গয়না, বাসনপত্র পুঁটুলিতে বেঁধেছিল। পরে বেরোনোর সময় দরজার খিল কোনওভাবে খুলতে পারেনি। শত চেষ্টার পর ক্লান্ত হয়ে মন্দিরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরদিন পুরোহিত পুজো করতে গিয়ে দরজা খুলে দেখেন, ডাকাত সর্দার পড়ে রয়েছে। পরে দোষ স্বীকার করে নেয় এবং ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে মায়ের চরণে নিজেকে সঁপে দেয়।
বর্ধমানের মানকরের আনন্দময়ী মা কালী |
বর্ধমানের মানকরের আনন্দময়ী মা কালী |
দেবীর মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, পূর্বপুরুষ ঈশ্বর গুপ্ত মায়ের একনিষ্ঠ সাধক ছিলেন। মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন গঙ্গার জলে দাঁড়িয়ে অজ্ঞান হলে এক মাসের মধ্যে মৃত্যু হবে। একদিন হঠাৎ কাটোয়ায় গঙ্গার জলে দাঁড়িয়ে গায়ত্রী জপ করার সময় অজ্ঞান হয়ে পড়েন। গুরুদর্শনের পর তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তার অস্থি পোড়ানো যায়নি। তাই এখনও মায়ের মন্দিরের পাশে অস্থি পোঁতা আছে। আনন্দময়ীর পুকুরে রাতে জলে নামা নিষিদ্ধ।
বর্ধমানের মানকরের আনন্দময়ী মা কালী |
বছর ২৫ আগে মানকর ভট্টাচার্য পাড়ার হিরু ভট্টাচার্য একবার রাতে মাছ ধরার জন্য জাল নিয়ে পুকুরে নেমে ছিলেন। জাল তুলতেই শুধু সাপ উঠেছিল। প্রতি বছর মায়ের পুজোর আগে অঙ্গরাগ হয়। অর্থাৎ আনন্দময়ী মায়ের রং হয়। ওই সময় কবিরাজ বাড়ির লোকেদের মন্দিরে ঢোকা নিষিদ্ধ । মায়ের পুজোর প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, মিষ্টান্ন, লবণবিহীন তরিতরকারি প্রসাদে দেওয়া হয়। নিশিকালে মায়ের পুজো হয় না। সন্ধ্যার মধ্যেই পুজো সম্পন্ন করতে হয়। পুজোর সময় নিয়ম অনুযায়ী ছাগবলি হয়। এছাড়াও দুর্গাপুজোর নবমীর দিন, জগদ্ধাত্রী পুজোর দিন, মাঘ মাসে রটন্তী পুজোর দিন ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী অমাবস্যায় মায়ের পুজোয় ছাগবলি দিতে হয়।
বর্ধমানের মানকরের আনন্দময়ী মা কালী |
বর্তমানে পুজোর তত্ত্বাবধায়ক গোপালবাবু বলেন, মৃগশিরা অর্থাৎ লাল রঙের ওপর কালো দাগ থাকা ছাগ বলি দেওয়া হয় না।' স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখনও ভক্তদের মনস্কামনা মা আনন্দময়ী পুরণ করে। ১৮৮০ সালে ওই কবিরাজ বাড়িতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একবার এসে মুগ্ধ হয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর আসাতে তাঁর নামে মানকর বিদ্যাসাগর উচ্চবিদ্যালয় করা হয়। - Jugashnkha Paper by জয়দেব লাহা
পড়ুন আরেকটি তথ্য
বীরভূমের মহারাজা নন্দকুমারের আকালীপুরের ভয়ংকর গুহ্য কালী
আপনার লেখা মনের লেখা লিখুন আমাদের সাথে The Point বাংলার সাথে। গল্প , কবিতা, রাজনীতি , রম্য রচনা, অর্থনীতি, সমাজনীতি , আপানার নিজের লেখা আমাদেরকে পাঠাতে পারেন। শুধু মনে রাখবেন আমরা মুক্ত চিন্তন নয়, দিব্য জ্ঞান নয়- কাণ্ড জ্ঞান চাই।
WebSite - https://www.pointbangla.com/
লেখার সাথে আপনার নাম , ফটো , পরিচয় দিয়ে পাঠাবেন। লেখা প্রকাশিত হলে আপনি আমাদের ওয়েবসাইট ফেইসবুক-টুইটার-ইউটিউব এ দেখতে পারবেন।